নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার সীমানা থেকে ১ কিঃমিঃ দূরে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী নামক স্থানে তিস্তা নদীর উপর তিস্তা ব্যারেজ অবস্থিত। তিস্তা নদীতে ব্যারেজ নির্মাণ পূর্বক অত্র অঞ্চলে গ্রেভিটি পদ্ধতিতে একটি সেচ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা বৃটিশ আমল হতেই অনুভূত হয়। ১৯৩৭খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন সরকার তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণকরে। মূল পরিকল্পনা গৃহীত হয় ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীগণ সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযু্ক্তি এবং জনবল দ্বারা নতুন জরিপ ও বিস্তারিত পরিকল্পনা ও ডিজাইন প্রণয়ন করে মডেল স্টাডির ভিত্তিতে তিস্তা ব্যারেজ এর বর্তমান স্থান নির্ধারণ করেন। তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ১৯৭৯সালে এবং ক্যানেল সিস্টেমের নির্মাণ কাজ ১৯৮৪-৮৫ সালে হাতে নেয়া হয়। ব্যারেজের দৈর্ঘ্য ৬১৫ মিটার, গেট ৪৪ টি। ক্যানেল হেড রেগুলেটর ১১০ মিটার দীর্ঘ, গেট ৮ টি। সর্বমোট গেট ৫২ টি। জুন ১৯৯৮ প্রকল্পের ১ম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। মোট নির্মাণ ব্যয় ৯৬৯.৫৩ কোটি টাকা।
তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের কাজ ১৯৮৪ সালে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে শুরু হয়।১৯৮৫ সালে সৌদি উন্নয়ন তহবিল ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং আবুধাবি উন্নয়ন তহবিলের প্রায় ২,৫০০কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা ব্যারেজসহ সেচ যোগ্য কৃষিজমি ও জলকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। উত্তরজনপদেরবৃহত্তররংপুর, দিনাজপুরওবগুড়াজেলারআমন মৌসুমে (খরিপ জুলাই-অক্টোবর) সম্ভাব্য খরা পরিস্থিতি হতে আমন শস্যকে রক্ষা, শুষ্ক মৌসুমে রবি শস্যে সেচ সুবিধা প্রদান এবং বর্ষা মৌসুমে সেচ এলাকা হতে পানি নিষ্কাশন, সম্পূরকসেচেরমাধ্যমেকৄষিউৎপাদনবৄদ্ধিএবংকর্মসংস্থানেরসুযোগসৃষ্টিকরাতথাদারিদ্র্যবিমোচনএপ্রকল্পেরমূলউদ্দেশ্য।নিষ্কাশন, বন্যানিয়ন্ত্রণএবংনদীশাসনেরসুবিধাপ্রকল্পেরঅন্যান্যউদ্দেশ্যসমূহেরমধ্যেঅন্যতম।তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প (ফেজ-১) নীলফামারী জেলার ৫টি উপজেলা- সদর, জলঢাকা, সৈয়দপুর, কিশোরগঞ্জ, ডিমলা, রংপুর জেলার ৪টি উপজেলা- সদর, গঙাচড়া, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, দিনাজপুর জেলার ৩ টি উপজেলা- চিরির বন্দর, পার্বতীপুর, খানসামা উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত। প্রধান খাল ৩৩.৬৭ কিলোমিটার,মেজর সেকেন্ডারী খাল (দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া) ৭৪.৪৩ কিঃমিঃ, শাখা খাল/ সেকেন্ডারী খাল২১৪.৭০কিলোমিটার,উপ-শাখা খাল/ টারশিয়ারী খাল ৩৮৭.৬৫ কিঃমিঃ, নিষ্কাশন খাল ৩৮০ কিঃমিঃ।প্রধান খালে পানি সরবরাহ ক্ষমতা ২৮৩ কিউসেক। প্রায় সকল খাল নীলফামারী জেলার উপর দিয়ে রংপুর, দিনাজপুর ওবগুড়াজেলায় গেছে। ১ম পর্যায়ের মোটপ্রকল্পএলাকা১,৫৪,২৫০হেক্টর(বাস্তবায়িত১,২৬,৩১০হেক্টর) এবং সেচ যোগ্য এলাকা ১,১১,৪০৬ হেক্টর (বাস্তবায়িত ৯১,২২৬ হেক্টর) ।
১ম ও ২য় পর্যায় মিলে মোট প্রকল্প এলাকা ৫ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর । প্রকল্পে মোট ভূমি অধিগ্রহণ ৩,৫০০ হেক্টর। ক্যানেল ডাইকের উভয় পার্শ্বে এবং অবকাঠামো এলাকায় জুন/২০১৩ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ০৬ লক্ষ গাছের চারা রোপণ করে বনায়নের মাধ্যমে উন্নত পরিবেশের সৃষ্টি করা হয়েছে। খালগুলিতে মাছ ও হাঁস পালনের অবাধ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ৬৪৯ কিঃমিঃ দীর্ঘ সেচ খালের উভয় পাড়ের ১২৯৮ কিঃমিঃ ক্যানেল ডাইক ও প্রায় ১০০ কিঃমিঃ পাকা রাস্তা প্রত্যন্ত এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। ২০১২-১৩ সালে ৬৯,৭৭৫ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়। বার্ষিক অতিরিক্ত ফসল উপাদন ১৪,২০,২৪৬ মে. টন (ধান, গম, সবজি)। ফসলের নিবিড়তা ১৮০% বৃদ্ধি পেয়ে ২৩৩% এ উন্নীত হয়েছে।
তিস্তা ব্যারেজের অতুলনীয় সৌন্দর্য্য এবং ইহার চতুর্দিকের সবুজ বেস্টনী, ফুল, বাগান, নদীর পুরাতন গতিপথ, সিল্ট ট্রাপ ইত্যাদি পর্যটক ও ভ্রমন পিপাসু মানুষকে আকৃষ্ট করে থাকে। ব্যারেজের সম্মুখের বিশাল জলরাশি সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চল হতে আগত অতিথি পাখিদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রের সৃষ্টি করেছে। এখান থেকেই শরৎ- হেমন্তে বরফাচ্ছন্ন কাঞ্চনজংঘার পর্বত শৃঙ্গ দৃশ্যমান হয়। দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারেজ পরিদর্শনসহ প্রকৃতির এহেন সৌন্দর্য্য উপভোগের জন্য প্রতিদিন এখানে অসংখ্য দেশী-বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস